দুশ্চিন্তা দূর করুন মাত্র 4টি প্রদক্ষেপে
1.আপনাকে আজকের জন্য বেচে থাকতে হবে:
আমাদের জীবন এগিয়ে চলছে অসম্ভব গতিতে, সেকেন্ডে প্রায় ১৯ মাইল। ভেবে দেখুন আজকের দিন কখনোই আসবেনা। আজ আমাদের এক অশেষ মূল্যবান সম্পত্তি এটাই আমাদের একমাত্র নিশ্চিত সম্পদ।যদি চিন্তিত থাকেন অতীতের সম্যসা নিয়ে অথবা অনাগত ভবিষ্যত নিয়ে তাহলে অতীতকে রূদ্ধ করুন। অতীতকে সমাধীতে দিন। অতীতের কথা ভেবে অনেক মূর্খই মরেছে। ভবিষ্যতকে-ও অতীতের মতই বন্ধ করে দিন। ভবিষ্যৎ হলো আজ....। আগামী বলে কিছু নেই। ভবিষ্যতের সঙ্গে অতীতের বোঝা যুক্ত হয়ে আজকের দিনটাকে করে তুলবে দুশ্চিন্তায় দূরবিষহ। আমাদের মুক্তির দিন হলো আজ। আমরা ভবিষ্যতের কথা ভেবে শক্তিহীনতা মানসিক দুশ্চিন্তা আর স্নায়বিক দূর্বলতায় ভুগি। অতএব অতীত আর ভবিষ্যৎকে বাদ দিয়ে সমস্ত বুদ্ধি, সমস্ত ক্ষমতা আর নিজের আগ্রহ দিয়ে আজকের কাজ করে যান ।
আজকের জীবনই সবকিছু , এতেই রয়েছে জীবনের পরিপূর্ণতা।কারণ গতকাল তো শুধু সপ্ন আর আগামী তো কল্পনা!! শুধু আজকের মধ্যে রয়েছে আপনার অস্তিত্ব। আজকের দিনটা নিজের করে নিন। আজকের জন্য বেঁচে থাকুন, গতকালই দুঃস্বপ্ন হতে উঠেছে আর আগামী আসায় ভরপুর।
তাই দুশ্চিন্তা দূর করুন। কারণ আগামী-ই তার ভার নেবে। ঘুম থেকে উঠে ভাবুন আজ এক নতুন দিন। আজকের দিনে করণীয় অনেক। ভাবুন, 24 টি ঘন্টা কিভাবে কাটাবেন? গত আর আগামী দুশ্চিন্তার মস্তক ঘর্মাক্ত করে, নাকি আজকের দিনটাকে অর্থপূর্ণ করার চেষ্টায়??
2. সমস্যা নিয়ে দুশ্চিন্তা নয়, চিন্তা করুন...
আমাদের মানব জীবন সমস্যায় জর্জরিত। আপনি যতই দুশ্চিন্তা জীবন যাপন করার চেষ্টা করুন না কেন পরিস্থিতি সর্বদা আপনার অনুকূলে থাকবেনা।আর এটাই জগতের চিরায়ত রীতি।
তাই বুদ্ধিমানের কাজ হলো সমস্যায় পড়লে দুশ্চিন্তায় সম্বিত না হয়ে ঠান্ডা মাথায় পরিত্রাণের উপায় নিয়ে চিন্তা করা। অনেক সময় আমরা এমন বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তা করি যার হয়তো কোনো বাস্তবতাই থাকে না।সুনির্দিষ্ট চিন্তার অভাবে আমরা অনেক সাধারণ সমস্যা নিয়ে এতটাই দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে যাই যে, ধারণা করে নেই এর সমাধান অসম্ভব।অঙ্কের সমাধান কিভাবে সম্ভব যদি আগেই ভেবেনিই যে, দুই আর দুই পাঁচ হয়! তাই সবার আগে দুশ্চিন্তার কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হোন।
নিজেকে প্রশ্ন করুনঃ
কি জন্য দুশ্চিন্তা করছি?
যে বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তা করছি তাতে আমার কতখানি এসে যায়?
এ ব্যাপারে আমি কি করতে পারি?
কাজটা কখন শুরু করব?
সমস্ত পরিকল্পনাটি লিখে ফেলুন।
কারণ, দেখা গেছে কোনো সমস্যা নিয়ে গভীরভাবে ভেবে সবটা লিখে ফেললে সমস্যার অর্ধেক সমাধান হয়ে যার।আর মানসিক দুশ্চিন্তা-ও অনেকাংশে হ্রাস পায়।
নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সমস্যা সম্পর্কে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা।
কখনোই ভাববেন না আপনার সমস্যাই সবথেকে জটিল আর তার সমাধান একেবারেই অসম্ভব। এতে আপনার চিন্তাধারা নৈতিবাচক হয়ে সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। যা আপনার দুশ্চিন্তাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিবে।
আবেগকে দূরে রাখুন এবং ইতিবাচক চিন্তায় মনোবল অক্ষুণ্ণ রাখুন।
সর্বদা নিজের অবচেতন মনকে বলতে থাকুন“ আমি তো ঠিকই আছি, আমার কোনো দুশ্চিন্তা নেই, আমার সমস্যা কি কোনো সমস্যা হল নাকি? এ তো এমনিই সমাধান হয়ে যাবে”।হাস্যকর মনে হলেও টিক এই চিন্তাধারাই আপনার দুশ্চিন্তাকে কমিয়ে দিতে পারে।
3.চরমের সম্মুখীন হবার প্রস্তুতি নিন...
দুশ্চিন্তা আমাদের মনোঃসংযোগ নষ্ট করে দেয়।ফলে সমস্যার সমাধান করার পরিবর্তে আমরা অধিক সমস্যায় জরিয়ে পড়ি। একটা পরিসংখ্যান থেকে পাওয়া যায়,ডাক্তারের কাছে আসা রোগীর মধ্যে প্রায় শতকরা 70% রোগীই তাদের রোগ নিরাময় করতে পারতো যদি তারা ভয় ও দুশ্চিন্তা দূর করতে পারতো।দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগ এ স্নায়ুর বিকৃতি দেখা দেয় আর তা থেকেই জন্ম নেয় নানা জটিল রোগ।তাই সমস্যায় পতিত হলে সর্বদা যা ঘটে গেছে তা মেনে নিয়ে দুশ্চিন্তা পরিহার করার চেষ্টা করা উচিত। কিন্তু কখনো কখনো আমরা এমন-ও সমস্যার সম্মুখীন হই যেখানে পরিনতি ভেবে দুশ্চিন্তা করাটাই স্বাভাবিক। সেই সকল ক্ষেত্রে সমস্যা সমাধানের জন্য তিনটি ধাপ অবলম্বন করতে পারেন।১ম ধাপঃ
আপনার দুশ্চিন্তার বিষয়টি পরিস্কার করে ভাবুন, নিজেকে প্রশ্ন করুন সবথেকে খারাপ পরিনতি কি হতে পারে।
২য় ধাপঃ
নিজেকে বলুন চুড়ান্ত পরিনতি আরও খারাপ হতে পারত। তাই স্রষ্ঠাকে ধন্যবাদ দিন এবং কোন দুশ্চিন্তা না করে ইতিবাচক ফল আশা করুন এবং চরমের সম্মূখিন হওয়ার মানসিক প্রস্তুতি নিন।
৩য় ধাপঃ
এবার ভেবে ফেলুন চূড়ান্ত পরিনতি স্বীকার হলে তো কিভাবে উন্নতি করবেন। নিজেকে মানসিকভাবে সন্তুষ্ট করুন এবং সবকিছু মানিয়ে নিতে প্রস্তুত করুন।
আমি নিশ্চিত মাত্র এই তিনটি ধাপের যথাযথ প্রয়োগ আপনাকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে সাহায্য করতে পারে।
4. নিজেকে কাজে ব্যাস্ত থাকুন...
দুশ্চিন্তা মুক্তির সবথেকে কার্যকরি ও বিজ্ঞানসম্মত উপায় হলো নিজেকে কাজে ব্যাস্ত রাখা।প্রায়শই দেখবেন মানসিক হাসপাতালের রোগীদের দিয়ে প্রায় সর্বক্ষনই নানাবিধ কাজ করানো হয়। এটা অমানবিক মনে হলেও এর ফলেই অনেকে স্বাভাবিক জীবন ফিরে পায়।যুদ্ধে অভিজ্ঞতা নিয়ে ফেরা অনেক সৈনিকেরই 'সাইকো নিউরেটিক ' নামক রোগ হয় যাতে মানসিক ভারসাম্য হারানো থেকে মৃত্যু প্রর্যন্ত ঘটতে পারে। তাদের চিকিৎসায় ডাক্তাররা তাদের সর্বক্ষণ ব্যস্ত থাকতে বলতেন। এতে তাদের যুদ্ধের স্মৃতি নিয়ে মানসিক চাপ হ্রাস পেত।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্বের সময় স্যার উইন্সটন চার্চিলকে মারাত্মক গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি দুশ্চিন্তা কাটাতে দৈনিক প্রায় ১৮ ঘন্টা কাজ করতেন তাকে যখন প্রশ্ন করা হয় যে প্রচন্ড দায়িত্ব সমন্ধে তাঁর দুশ্চিন্তা হয় কিনা তিনি জবাব দেন "আমি দারুণ ব্যস্ত...দুশ্চিন্তা করার মতো সময় নেই।" কাজকে ওষুধ হিসেবে ব্যবহারের মনস্তাত্ত্বিক নাম হলো 'Occupational Therapy '
আমরা যখন ব্যস্ত থাকি না আমাদের মন তখন শূন্য হয়ে যায়। আর আমরা জানি প্রকৃতি শূন্যতাকে ঘৃণা করে। প্রকৃতি শূন্যমান ভরাট করতে চায়। কিন্তু কি দিয়ে? স্বভাবতই আবেগ দিয়ে। কিন্তু কেন? কারণ আবেগ হলো -দূশ্চিন্তা, ভয়, ঘৃণা এসব থেকেই আসা। এসব আবেগের এতই ক্ষমতা যে মনের শান্তি আর সুখের চিন্তাকে ঘরছাড়া করে দেয়।
এখন প্রশ্ন হলো কাজে ব্যস্ত থাকার মতো সহজ ব্যাপারে দুশ্চিন্তা দূর হয় কেন? এর কারণ মনস্তত্বের একটা সরল নিয়ম। সেটা হলো -কোন মানুষ তিনি যতই বুদ্ধিমান হোক না কেন-কিছুতেই একই সময়ে একাধিক বিষয়ে ভাবতে পারে না। বিশ্বাস করতে পারছেন না? তাহলে আসুন একটা পরিক্ষা করা যাক- আপনি চেয়ারে হেলান দিয়ে ভাবুন তো - এতক্ষণ যে ৪ টি পদক্ষেপ পড়লেন সেগুলোর নাম কি কি ছিল আর টিক একই সাথে ভাবুন কাল সকল -কি কি করবেন?
নিশ্চিই বুঝে গেছেন আপনি একটার পর একটা ভাবতে পারছেন কিন্তু কিছুতেই একসঙ্গে নয়। আবেগের ক্ষেত্রেও তাই। কোন উৎসাহের কাজে জড়িত থেকে একই সঙ্গে উদ্বেগে, দুশ্চিন্তায় আমরা কাহিল হই না। একটা আবেগ অন্যটাকে দূর করে দেয়। তাই দুশ্চিন্তা দূরিকরণ এর সবথেকে উত্তম ও কার্যকরি পদক্ষেপ হলো নিজেকে অন্য কাজে ব্যাস্ত রাখা।
উপরোক্ত বিষয়গুলো আপনার বাস্তব জীবনে যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে পারলে আপনার যেকোন দুশ্চিন্তা হ্রাস করা সম্ভব। তাই আজ থেকে অযথা দুশ্চিন্তায় নিজের মূলবান জীবন ক্ষয় না করে এক দুশ্চিন্তামুক্ত নতুন জীবনযাপনের পথে এগিয়ে যান।
1 Comments
Awesome
ReplyDeleteThanks for your support.