কার্যসিদ্ধির কার্যকরী কিছু উপায়!
এ পৃথিবীতে আপনি যে-ই হোন না কেন, যেখানেই অবস্থান করুন,যে কাজই করতে চান,আপনাকে অন্যের মুখোমুখি হতেই হবে।তাই সকল ক্ষেত্রে সহজ ও সুষ্টুভাবে কার্যসিদ্ধির জন্য আপনার গুরুত্বপূর্ণ যে গুনটি থাকা আবশ্যক তা হলো management skill. অর্থাৎ আপনি আপনার সামনে থাকা ব্যক্তিটিকে কিভাবে manage করবেন তার দক্ষতা। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী কিছু বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো যা আপনাকে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সাহায্য করতে পারে।১. অপরের সম্পর্কে আন্তরিকভাবে আগ্রহী হয়ে উঠুন:
আপনি যদি চান আপনার সামনে থাকা ব্যক্তিটি আপনার সম্ভন্ধে আগ্রহী হয়ে উঠুক, আপনাকে মূল্য দিক,তাহলে আপনার সর্বপ্রথম দায়িত্ব হলো - তার বিষয়ে আন্তরিক আগ্রহ দেখানো।প্রত্যেকের কাছে তার "আমি" শব্দটাই সবচেয়ে বেশি দামী।তাই যদি চান কেউ তার মূল্যবান সময় থেকে আপনাকে কিছুটা দিক, তাহলে আপনিও কিছুটা সময় দিয়ে তার প্রতি আগ্রহ দেখানো উচিত। আগ্রহ সহকারে তার কথা শুনা উচিত, তাকে তার প্রিয় বিষয়ে বলতে উৎসাহ দিন।তার নিজের,তার রুচির প্রশংসা করুন।তাকে শ্রেষ্ঠত্ব উপলব্ধির সুযোগ দিন।মনে রাখবেন কাজটা কিন্তু আন্তরিক ভাবেই করতে হবে।সর্বদা নিজের ego কে দূরে রাখুন।মনে করবেন আপনার সামনে থাকা ব্যক্তিটি কোন না কোন দিক দিয়ে আপনার থেকে বড়।ভেবে দেখুন এতে আপনার কোন ক্ষতি হচ্ছে না কিন্তু আপনার উদ্দেশ্য পূরণ সহজ হয়ে যাচ্ছে।আপনি যাদের সংস্পর্শে আসেন তাদের সমর্থন আশা করেন আর তাদেরকেও সমর্থন করুন।আপনি চান আপনার প্রকৃত মূল্যায়ন, নিজের ছোট দুনিয়ায় আপনার গুরুত্ব। তাহলে অন্যে কেন চাইবে না?
তাহলে আসুন অন্যকে সেই জিনিসটা দেওয়ার চেষ্টা করি যা আমরা তাদের কাছে আশা করি।
২. কখনোই তর্ক করবেন না:
এ পৃথিবীতে আমাদের সবচেয়ে বড় ভুল হচ্ছে আমরা সকলেই ভাবি আমরা নিজেরা ঠিক আর অন্যরা ভুল।আর এ থেকেই শুরু হয় তর্ক,বিতর্ক আর বিশৃঙ্খলা। আপনার কার্যসিদ্ধি, এবং সহজে সমস্যা সমাধানের জন্য অন্যতম পরামর্শ হলো- কখনোই তর্কে জড়াবেন না।হোক আপনার সামনে থাকা ব্যক্তিটি সম্পুর্ন ভুল,তবুও আপনি যতই তর্ক করেন না কেন্সে মেনে নিলেও কখনো "মনে "নেবে না।তার কারন কেউ-ই হারতে চায় না বা হার মেনে নিতে চায়না।তাই বুদ্ধিমানের কাজ হচ্ছে সর্বদা অন্যদের জেতার সুযোগ করে দেওয়া।পথের শুরুতেই কাউকে আটকে দেবেন না।তাকে চলতে দিন... যদি সে ভুল হয় তো চলতে চলতে এক পর্যায়ে সে তার ভুল বুঝে যাবে।তখন নিজে থেকেই সে আপনার কাঙ্ক্ষিত পথে চলে আসবে।জোরের সঙ্গে কখনোই বলবেন না যে সেই মানুষটি ভুল,আর আপনি ঠিক।এভাবে বলুন, "হ্যাঁ আপনার কথায় যুক্তি আছে, তবে এই দৃষ্টিকোন থেকে একটু ভেবে দেখলে কেমন হয়?"
আপনি যখন তার মতের মূল্য দিবেন তখন সে-ও চাইবে আপনার কথা শুনতে, সময় নিয়ে আপনার বিষয়টাও একটু ভেবে দেখতে।একপর্যায়ে দেখবেন কোন প্রকার তর্ক ছাড়াই আপনার সামনে থাকা ব্যক্তিটি সম্পুর্ন আপনার মতামতকে সমর্থন করাতে পেরেছেন।
৩. ভুল করে থাকলেও সরাসরি স্বীকার করুন:
"SORRY", মাত্র ৫ টি বর্ন।উচ্চারণ করাটাও কঠিন নয়।কিন্তু সেই উচ্চারণ করা অবধি পৌছানো-টা আমাদের কাছে রীতিমতো দক্ষযজ্ঞ ব্যাপার!!কারন একটা-ই, আমাদের দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত মনোভাব, 'ভুল স্বীকার করলে সমস্যা আরো বেড়ে যাবে,ক্ষমা চাইলে আত্নসম্মান বালি চাঁপা পড়ে যাবে।তাই অন্যের উপর 20,000 hz এর চিল্লানির বারিধারায় বর্ষণ করেই হোক আর ঘাড় দিয়ে ঠেলেই হোক,যেকোনো মূল্যে ভুলটিকে বালিচাপা দিতেই হবে।অবশেষে কোন কিছু না হলে আপনি যে অসহায়, পরিস্থিতির স্বীকার, অশ্রুপাত করে তা-ও বলা যাবে তবুও একটা বারের জন্য-ও SORRY বলে ভুল স্বীকার করা যাবে না।'
তাই তো? আমি জানি কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া-ও আমাদের অধিকাংশের-ই মনোভাব এমন।এবং আপনি না চাইলেও আপনার অবচেতন মনে এমনটাই করে বসবে।আমার হয়তো কিছু বাক্যে অন্যের মনোভাব পাল্টানোর সক্ষমতা নেই,তবে একটু ভেবে দেখুন আপনার মূল্যবান জীবনে আপনি কতই না পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছেন যেখানে শুধুমাত্র একবার SORRY বললেই হয়তো সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেত।কিন্তু অযতা তর্ক-বিতর্ক আর অন্যের প্রতি দোষারোপে আপনার কত-ই না শ্রম, সময় আর শান্তি নষ্টের কারন হয়ে দাড়িয়েছে!! ভুল করে থাকলে একটি বার ক্ষমা চেয়ে দেখুন।আশা করি তুলনামূলক ভালো ফল পাবেন।
এর যৌক্তিক কারন-ও রয়েছে -
আপনার সামনে থাকা প্রত্যেকটি ব্যক্তি-ই চায় শ্রেষ্ঠত্ব উপলব্ধি করতে, সে যে ঠিক তা প্রমাণ করতে। তাই যখন আপনি ভুল করার পর-ও আপনি তা অস্বীকার করতে চানবা তা নিয়ে তর্ক বিতর্ক করেন,তখন স্বভাবতই সকলের মধ্যেই একধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।আপনি হয়তো তর্ক - বিতর্ক করে অথবা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে হলেও নিজের অপরাধকে চাঁপা দিয়ে পরিস্থিতি অনুকুলে আনতে পারেন। কিন্তু মনে রাখবেন, তা কখনোই টেকসই নয় এবং আপনার সামনে থাকা একজন ব্যক্তির মনে হলেও আপনার প্রতি বিরূপ মনোভাব জন্মাবে যা কোনভাবেই প্রত্যাশিত নয়।এবার ভেবে দেখুন... আপনি ভুল করে ফেলেছেন, যে কারণেই হোক কিছু একটা ভুল হয়েই গিয়েছে...
এবার যার কাছে ভুল হয়েছে কোন অযুহাত ছাড়া-ই তার কাছে গিয়ে বলুন- ' হ্যাঁ এ বিষয়টি আমর-ই ভুল হয়েছে, আমার এটা করা উচিত হয়নি।'
বিশ্বাস করুন,মাত্র একবার জীবনে এমনটা করে দেখুন, আপনার সামনে থাকা ব্যক্তিটির কাছ থেকে আশাতীত ইতিবাচক ফল পাওয়ার নিশ্চয়তা আমি আপনাকে দিচ্ছি।আপনার বিনয় ও আন্তরিক স্বীকারোক্তি তাকে এক সেকেন্ড হলেও ভাবাতে বাধ্য করাবে।আপনার ভুল করার পিছনে কোন অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি বা কারন ছিলো কি না, আদৌ তার জন্য আপনাকে দোষারোপ করা যায় কি না, এবং দেখিবেন কোন এক সময় তিনি আপনাকে সম্পুর্ন সমর্থনও করতে শুরু করেছেন।কারণ একটাই,আপনি তার সামনে নত হয়ে তাকে শ্রেষ্ঠত্ব উপলব্ধির সুযোগ দিয়েছেন।ভেবে দেখুন এতে আপনার কোন সম্মানহানী হবে না, কিন্তু অনায়াসেই অনেক কঠিন সমস্যার-ও সমাধান করতে পারবেন।
তাই সহজেই কার্যসিদ্ধির জন্য অন্যতম উপায় হলো ভুল করে থাকলে তা অকপটে আন্তরিক ভাবেই স্বীকার করা।
৪. আন্তরিক ভাবে অন্যের দৃষ্টিকোন থেকে চিন্তা করুন:
Management skill development- এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো, নিজেকে অন্যের জায়গায় রেখে সবকিছু ভেবে দেখা। অনেক সময় আপনি এমন-ও পরিস্থিতিতে পড়তে পারেন যেখানে আপাতদৃষ্টিতে আপনার মনে হতে পারে আপনার সামনে থাকা ব্যক্তিটি ভুল এবং অন্যায় করছে।কিন্তু আপনার সবথেকে বিরক্তির কারন হবে তখন, যখন সে তা মনে করবে না, সে ভাববে যে সে ঠিকই করেছে।তাই তাকে দোষ দেওয়ার কোন অর্থই হয় না।যেকোন বোকাই অন্যের দোষ দিতে পারে।আপনার দায়িত্ব হলো -তাকে বোঝার চেষ্টা করা। ভাবুন তার এমন আচরণের পেছনে কি কারন থাকতে পারে।তার জায়গায় নিজেকে রেখে চিন্তা করুন,তার মতো পরিস্থিতিতে আপনি পড়লে কি করতেন।আপনার অনুভুতি-ই বা কেমন হতো।কখনোই না জেনে হটকারিতা করে অন্যকে সরাসরি দোষারোপ দিবেন না...বরং এরকমটা বলুন, " আপনার এমন আচরণের জন্য আপনাকে দোষারোপ করা যায় না, আপনার যায়গায় আমি থাকলে আমিও এরকমটা করতাম।"
দেখুন লোকটি আপনার সম্বন্ধে আরো আগ্রহান্বিত হয়ে উটেছেন এবং আপনার কাজটাও অনেকটা এগিয়ে দিতে চাইছেন। তাই সততার সাথেই মন থেকেই অন্যের যায়গায় নিজেকে রেখে সমস্ত বিষয়টি একবার হলেও ভেবে দেখুন।
একমাত্র বুদ্ধিমান এবং আলাদা ধরনের মানুষ-ই এরকমটা চেষ্টা করেন।আন্তরিক ভাবে এটা করতে পারলে আপনি অনেক বিরক্তি ও সময় নষ্টের হাত থেকে বাঁচতে পারেন এবং অন্যকে দিয়ে আপনার কার্যসিদ্ধ-ও অনেকটা সহজ হয়ে যায়।
বর্তমানে আমাদের ব্যর্থতা ও ভোগান্তির অন্যতম কারণ হলো আমরা অন্যকে মূল্যায়ন করতে চাই না।এ থেকেই সৃষ্টি হয় যত বিশৃঙ্খলা ও অশান্তির। ক্ষমাশীলতা, আন্তরিকতা, সহনশীলতা, মূল্যায়ন ও বিনয় -এ গুনগুলোর যথাযথ সমন্বয় যদি আপনার জীবনে করতে পারেন তো জীবনের সকল পদক্ষেপে আপনার সাফল্য অবশ্যম্ভাবী।
2 Comments
This comment has been removed by the author.
ReplyDeleteVery helpfully post
ReplyDeleteThanks for your support.